বিল্ডিং কনসালটেন্সি


বিল্ডিং কনসালটেন্সি

যাদের ছোটখাটো কনসালটেন্সি আছে, গ্রামে কিংবা শহরে দুতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত অনায়াসে 1 বা 2 দিনে অল্প টাকায় বিল্ডিং ড্রয়িং ডিজাইন করে দিয়ে থাকেন,
কিন্তু আসলে ডিজাইনের ড ও পারেন না !!!
তাদেরকে নিয়ে আজকে আমার এই লেখা।
কি করছেন আপনারা!!!????
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন !??
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরিধি অনেক বড়।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর মানে এই নয় যে আপনাকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।
তাই অযথা ডিজাইন ক্যালকুলেশন না পেরেও আন্দাজের ওপরে বিল্ডিং এর ডিজাইন দিতে যাবেন না।
আপনি যদি WSD / USD কোন মেথড ই না পারেন , যদি বিল্ডিং এর লোড ক্যালকুলেশন না পারেন, যদি মাটির বিয়ারিং ক্যাপাসিটি কি সেটা খুব ভালোভাবে আপনার মাথায় না ঢুকে, ফুটিং এর ধরন, ফুটিং এর ডিজাইন ক্যালকুলেশন, কলাম ডিজাইন, বীম ডিজাইন, সিঁড়ি ডিজাইন, ছাদ ডিজাইন এছাড়াও বিল্ডিং নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত কোন ডিজাইন ই আপনি না পারেন, কিংবা অল্প অল্প পারেন,
যদি বিএনবিসি কোড খুব ভালোভাবে না বুঝেন, যদি খুব বেশি সিজমিক এনালাইসিস না বুঝেন (যেসব বিল্ডিং এর জন্য সিসমিক এনালাইসিস প্রয়োজন),
যদি মাটির bearing capacity সম্পর্কে আপনার ধারনা না থাকে,
অর্থাৎ এক কথায় আপনি আন্দাজের উপর ডিজাইন করছেন, তাহলে কি আপনি যেই বাড়ির মালিক তার অনেক কষ্টের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে বিল্ডিং বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ওপর জুলুম করছেন না?
আমি এ ধরনের অনেক ইঞ্জিনিয়ার এর ডিজাইন দেখেছি, বস্তুতপক্ষে আমাদের দেশে যারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বিল্ডিং ডিজাইন করে অনেকে আবার বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে বিল্ডিং ডিজাইন করে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিজাইন পারে না।
আমরা সকলেই জানি WSD method ডিজাইনের চেয়ে USD method ইউজ করে ডিজাইন করলে খরচ অনেক কম পড়ে।
ঠিক একই রকম ভাবে বীমের মোমেন্ট বের করার অনেকগুলো মেথড আছে যেগুলো ব্যবহার করলে বিল্ডিং ডিজাইন ইকনোমিক্যালি অনেকটাই সেভ করা যায়।
এখন আসল কথা হচ্ছে আপনারা যেখানে বিল্ডিং এর লোড ক্যালকুলেশন ই পারেন না, সেখানে ডিজাইন তো অনেক দূরের কথা,
আবার অনেকে ডিজাইন পারেন কিন্তু লোড ক্যালকুলেশন পারেন না, এনালাইসিস পারেন না।
এক কথায় খুবই বাজে পরিস্থিতি আমাদের দেশের।
আমি কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারের ডিজাইন এনালাইসিস করে দেখেছি, ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই ওভার ডিজাইন করেছেন।
আর এতে করে মালিকপক্ষ ইকনোমিক্যালি অনেক বেশি লস এর মধ্যে পড়েছেন, আর মালিকপক্ষের লস মানে দেশের লস।
কেননা যে বিল্ডিং টা মাত্র এক কোটি টাকা দিয়ে হয়ে যাইতো ঠিক একই বিল্ডিং এর ডিজাইন এর কারণে 20 লক্ষ টাকা বেশি লাগে । যেখানে আটটা স্টিল দিলে এনাফ ছিল সেখানে দশটা বারোটা 14 টা পর্যন্ত স্টিল দেয়া হয়েছে, সব সেক্টরে এই পরিমাণটা বাড়ানো হয়েছিল। বেস, কলাম, বিম, ছাদ অর্থাৎ সব সেক্টরেই।
গ্রামে মাত্র 2000 স্কয়ার ফিটের বিল্ডিং কোনরকমে তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়েছেন মালিক, আপাতত একতলা কমপ্লিট করবেন, সেইসব বিল্ডিংয়ে দেখেছি শুধুমাত্র ডিজাইন সংক্রান্ত কারণে প্রতি তলায় 1 থেকে 2 লাখ 3 লাখ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ হচ্ছে।
অর্থাৎ তিন তলা মিলে হিসাব করলে 6 থেকে 9 লাখ টাকা পর্যন্ত বেশি যাচ্ছে।
যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ হচ্ছে আমাদের এই ফেসবুক গ্রুপ টি, তাই আমি মনে করি এই গ্রুপের মাধ্যমে যারা কনসালটেন্সি করেন কিন্তু বাস্তব পক্ষে ডিজাইন পারেন না তারা এই গ্রুপের মডারেটর এডমিন দের সহযোগিতা নিয়ে অনলাইন বেস ক্লাসের আয়োজন করে বিল্ডিং এর ডিজাইন শেখার একটি প্লাটফরম তৈরি করতে পারেন।
অথবা অন্য যেকোন উপায়ে ডিজাইন শিখে নিন।
আমরা যেরকম ভাবে গরিব দেশ একই রকম ভাবে দুর্যোগ প্রবণ দেশ ও বটে।
তাই আন্দাজের উপর ডিজাইন করে শুধু শুধু মানুষের টাকা নষ্ট করবেন না। ব্যক্তি, দশ ও দেশের ক্ষতি করবেন না।
আজ এ পর্যন্তই থাকল।
পরিশেষে সকলের প্রতি সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করে আবারো একই আহ্বান জানিয়ে শেষ করলাম।

No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.